আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমানোর প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি। বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এই প্রস্তাবের পর বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবিধানের ১১৯-১২৪ ধারা অনুযায়ী জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। বাগেরহাট-২ ও বাগেরহাট-৩ আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। নতুন বিন্যাসে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর, কচুয়া ও রামপাল) এবং বাগেরহাট-৩ (মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা)।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানের যুক্তি ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলার আয়তন ৩,৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ১৩ হাজার। জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি বিবেচনায় এই জেলা এখনো চারটি আসন রাখার যোগ্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাগেরহাট চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি শাহেদ আলী রবি বলেন , বাগেরহাট এমনিতেই অবহেলিত জেলা। তারপর যদি আরো একটি আসন কমে যায়, তাহলে আরো অবহেলিত হয়ে যাবে। এমনিতেই কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি, আবার যদি আসন চারটি থেকে একটি কমে যায়, তাহলে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে। এটা নির্বাচন কমিশনের ভুল সিদ্ধান্ত।
ছাত্রনেতা রাসেল বলেন, এখানে যে চারটি আসন ছিল, এটাই আমাদের কাছে কম মনে হয়। সেখানে তিনটি করায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনটি আসন করা হলে জনগণের প্রত্যাশা -আকাঙ্ক্ষা ঠিকমতো সংসদে পৌঁছাবে না। তিনটি আসন করা হলে বাগেরহাটের মানুষ অবহেলিত হবে। আমরা এ বিষয়টি মেনে নেব না। আমরা বাগেরহাটবাসী সকলে মিলে এই সিদ্ধান্ত প্রতিহত করব। আমরা চাই বাগেরহাটে চারটি আসন আছে, চারটি আসনই থাকবে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, কিছু সময় আগে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি আমরা দেখতে পেলাম। বাগেরহাট জেলা একটি বৃহত্তম জেলা, নয়টি উপজেলায় চারটি আসন নিয়ে গঠিত এই জেলা। ১৯৮৪ সাল থেকে এই জেলায় চারটি আসন নিয়ে গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে খসড়া প্রস্তাব দেখলাম, বাগেরহাটকে তিনটি আসনে রূপান্তরিত করেছে। এটি একটি নিন্দনীয় ব্যাপার, বাগেরহাটের জন্য একটি অপমানিত ব্যাপার। এটি একটি প্রাচীন শহর, এখানে দিন দিন আরো আসন বাড়ানো উচিত। সামনে সংসদ নির্বাচন আছে, এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন,বাগেরহাটে চারটি আসন থেকে একটি কমানোকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করছি। সুন্দরবন, ষাট গম্বুজের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য যেখানে রয়েছে, সেই জায়গাটাকে দুর্বল করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এটাকে অন্যায় মনে করছি, আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এসএস